নিশ্চিত করা যাচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব, ঝুঁকিতে গ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কুমিল্লায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। নগর, মহানগর এবং প্রধান সড়ক-মহাসড়কের পাশের এলাকাগুলোতে মানুষ কিছুটা জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। তবে অসচেতনতার কারণে গ্রামগঞ্জ ও সেখানকার হাটবাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব কিছুতেই যেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কুমিল্লায় করোনা সংক্রমণ কমানো যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৭ মার্চ থেকে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি এবং জনসমাগম বন্ধে কুমিল্লায় পুরোদমে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। সামাজিক দূরত্ব ও মানুষকে সচেতনতার কাজে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপির সদস্যদের সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামেন সশস্ত্র বাহিনী। এরপর ১০ এপ্রিল থেকে কুমিল্লাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসক। তবে শতভাগ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পরছে না প্রশাসন। শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন একজন।

কুমিল্লার একটি রাস্তায় মানুষের ভিড়সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরী থেকে শুরু করে গ্রামের রাস্তায় মানুষের ভিড় রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলাভিত্তিক গ্রামগঞ্জ এবং হাটবাজারগুলোতে ভিড় বেশি। প্রশাসন থেকে সামাজিক দূরত্ব কমানোর উদ্দেশ্যে জনসমাগম বন্ধের আহ্বান জানানোর পরও মানুষের পদচারণা কমছে না।
উপজেলাগুলোর অনেক স্থানে দেখা গেছে, লকডাউন অমান্য করে যানবাহন চলছে স্বাভাবিকভাবে। জেলার বেশিরভাগ বড় কাঁচাবাজারে এখনও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। তবে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা টহলে আছেন।
প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য। নেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মকা-। তারপরও বিপদগামী মানুষ কুমিল্লা জেলাকে দিন দিন করোনার ঝুঁকিতে ফেলছেন।


কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, আমরা জেলার সব মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এসবের বাস্তবায়নও করছি। তবে এতকিছুর পরও মানুষের অসচেতনতা দেখলে খারাপ লাগে। আমি এখনও বলবো, আপনারা সচেতন হন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহযোগিতা করুন।
সামাজিক দূরত্ব মানছে না মানুষমনোহরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, গ্রামের মানুষ চোর-পুলিশ খেলছে প্রশাসনের সঙ্গে। আমরা অভিযানে গেলে খবর পেয়ে দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যায়। চলে আসার পর আবার দোকান খুলে বেচাকেনা শুরু করে। ঠিক একই অবস্থা পুলিশের ক্ষেত্রেও। তারা ডিউটিতে গেলে গাড়ির আওয়াজ শুনে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে আবার জনসমাগম তৈরি করে। করোনা মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা জনগণের মাঝে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আজিম উল আহসান জানান, ‘জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এবং লকডাউন নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর জানান, এতকিছুর পরও মানুষ যদি নিজ থেকে সচেতন না হয়, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি।


সামাজিক দূরত্ব না মানার বিষয়ে বরুড়ার ওড্ডা গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী কৃষক রফিক মিয়া বলেন, পেটে খেলে পিঠে সয়। পেটে ভাত নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবো কী করে। সবজি চাষ এবং বিক্রি করাই আমার কাজ। আমাদের ক্রেতা কাছাকাছি না গেলে সবজি কার কাছে বিক্রি করবো। এদিকে সরকার থেকে কোনও ত্রাণও আমি পাইনি।
লাকসামের সংবাদপত্র হকার বাবুল মজুমদার বলেন, দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করে নিজে এবং পরিবারের ব্যয় বহন করতে হয়। করোনাভাইরাসে ফলে লকডাউনের কারণে পত্রিকা বিক্রি বন্ধ হয়ে পড়ায় আমরা আর্থিক সংকটে পড়েছি। সামাজিক দূরত্ব থেকে এখন পরিবারের সদস্যদের তিন বেলা খাবার জোগাড়ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!